দ্য ইনস্টিটিউট অফ এক্সপ্লোরেশন প্রকাশিত ত্রৈমাসিক
হিমদ্যূতি প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, অগাস্ট, 2016,
যুগ্ম সম্পাদক ডাঃ অটল কুমার হাটি, দীপ্তেশ মণ্ডল
সম্পাদকমন্ডলী
দুর্গাদাস সাহা, সভাপতি, দ্য ইনস্টিটিউট অফ এক্সপ্লোরেশন,
এম. নবী তরফদার, সাধারণ সম্পাদক, দ্য ইনস্টিটিউট অফ এক্সপ্লোরেশন,
শ্রীমতি আরতি দে,
অসিত কুমার রায়,
সৌমিত্র সাহা,
অভিজিত বসু,
দেবাশীষ আচার্য্য
হিমাদ্যূতি প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, অগাস্ট, 2016,
সম্পাদকীয়
দেখতে দেখতে তিন মাস হয়ে গেল প্রথম সংখ্যা প্রকাশনা থেকে l মে'র পর আগস্ট সংখ্যা l আসলে চলা শুরু l আমাদের চলতে হবে সময়ের সাথে সাথে l উদ্বোধনী সংখ্যা ছিল 'এভারেস্টের' মাসে l কেননা ওই সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে অভিযান হয় l তার মানে এই সময় কোনো অভিযান হয়না এমন নয় l এটা অবশ্য নির্ভর করে কোথায় হচ্ছে তার ওপর l নেপাল হিমালয় এখন বন্ধ l আমাদের অভিযাত্রী-দল তো চলেছেন এবার একের পর এক l মে. নবী তরফদারের নেতৃত্বে উত্তর পশ্চিম হিমালয়ের পোলোগোঙকা আরোহনের উদ্দেশ্যে 12 আগস্ট রওনা দিচ্ছে একটি দল l তারপর বন্দনা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে রূপকুন্ড ট্রেকিং আর দেবাশীষ আচার্য্যের দল যাচ্ছেন রন্টি'র উদ্দেশ্যে l ওঁদের সবার জন্য হিমাদ্যুতি তথা ইন্সটিউটের পক্ষ থেকে সর্বাঙ্গীন শুভকামনা রইলো l দেবাশীষ অবশ্য ইতিমধ্যেই ঘুরে এসেছেন হিমাচলের শ্রীখণ্ড কৈলাস থেকে l আমাদেরই তিন সভ্য রাজেশ শ, প্রসেনজিৎ রায় ও দীপিকা নাথ এঁরা অমরনাথ দর্শন করে নির্বিঘ্নে ফিরে এসেছেন l এবছর এভারেস্ট সহ হিমালয়ের বেশ কিছু দুঃসাহসিক অভিযান-এ যান মলয় মুখোপাধ্যায়, সত্যরূপ সিদ্ধান্ত, রুদ্রদেব হালদার, দেবরাজ দত্ত, প্রদীপ সাহু, চেতনা সাহু, ত্রিশলা গুরুং, সুলক্ষণা, দেবাশিস বিশ্বাস, সুনিতা হাজরা, রাজীব ভট্টাচার্য, গৌতম, ঘোষ, পরেশ নাথ, সুভাষ পাল প্রমুখ l দুঃসাহসিক অভিযানে যাওয়ার জন্য এঁদের অভিনন্দন এবং আগামীদিনে হয়তো শেষোক্ত চারজনের সুপরামর্শ থেকে আমরা বঞ্চিতই থাকবো l এই এডভেঞ্চার বা পাহাড়ের টান কিন্তু যুব-সমাজকে বা বৃহত্তর অর্থে মানব-সমাজ-কে অনেক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে চলেছে l তাই কোনো অভিযান-কে বা কোনো এডভেঞ্চার কৰ্মকান্ডকে নেতিবাচক দিক থেকে দেখা ঠিক নয় l বরং চাই এ-পথেই আসুন যুব সমাজ l আরো বেশি করে l আর, আমাদের বার্ষিক সমাবর্তনে একশো-ছুঁই ছুঁই পাহাড়-শিক্ষার্থীর উপস্থিতি সেই ভাবনা আর আশাকে দৃঢ় করে l
হিমাদ্যুতি-তে এবারেও বেশ কিছু বিদগ্ধ মানুষ লেখা দিয়েছেন l তাঁদের অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করছি l পাশাপাশি নবীন লেখনীকেও জায়গা দেওয়া হচ্ছে l একদিকে যেমন পত্রিকা সমৃদ্ধ হবে অন্যদিকে নবীনরাও উৎসাহ পাবেন l ইতিমধ্যে আমাদের বৈদ্যুতিন সংস্করণ-ও প্রকাশিত l হিমাদ্যুতি এই মুহূর্তে এক্কেবারে সদ্য-জাত বলা যায় তাই কিছু ত্রুটি যদি থেকে থাকে তা অনিচ্ছাকৃত এবং উল্লেখ্য আমাদের পত্রিকা গোষ্ঠী সেই অর্থে পেশাদার নয় অর্থাৎ নিজেদের কাজ নিজেরা করব এই ভাবনা বা লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে l আগামীতে আরো সমৃদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যে আমরা সবার মতামত ও পরামর্শ-প্রার্থী l
(পূর্ব সংখ্যার পর)
প্রতি রবিবার আহিরীটোলার আড্ডায় যাবার আগে মনোহরপুকুর রোডে কানাইদার (কানাইলাল ঘোষ) বাড়িতে পৌঁছে যাওয়া ছিল রুটিন l বইমেলার পর এক রবিবার সেই সব মালপত্র বগলদাবা করে হাজির হলাম কানাইদার বাড়িতে l ভাবনার রূপ পেতে শুরু করলো 1942-এ, দার্জিলিং থেকে পায়ে হেঁটে সান্দাকফু পৌঁছানোর মধ্যে দিয়ে কানাইদার হিমালয়ে ভ্রমণের ভাবনার শুরু l এরপর আর থামেননি l হিমালয়ে ট্রেকিং, ভূ-ভারতের নানাপ্রান্তে বেড়ানো এই অভিজ্ঞ মানুষটি ছিল আমার গাইড, ফিলোজফার, বেড়ানোর অভিভাবক l ম্যাপ-পত্তর ঘাঁটতে ঘাঁটতে শোনালেন 1946-এ ওনার বাবা দক্ষিণ ভারত উপকূলে মন্দির দর্শনে গিয়েছিলেন দীর্ঘদিনের জন্য l গাড়িতে চাপা ছাড়াও কখনো কখনো সাগর-পাড়ে ওনাকে হাঁটে হয়েছিল l অতএব উপকূল পদযাত্রা করা হবে এমন একটা আশ্বাস নিয়ে সেদিনের আড্ডা শেষ হলো l কোনারক যাবার জন্য গাড়িপথ ছিলনা, তখন পুরি থেকে অনেকেই কোনারক আসতেন পালকি বা গরুর গাড়ি চেপে আবার কেউ বা পায়ে হেঁটে l ওনারা হাঁটেন বেলাভূমি ধরে শর্টকাট পথে l এর উল্লেখ আছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু ও নির্মলকুমার বসুর লেখায় l সারা বছর ধরে চলল চিন্তাভাবনা ও তথ্যসংগ্রহের পালা l 1982-র মার্চে জোঙরি, জুনে কিন্নর কৈলাস পরিক্রমা, অক্টোবরেও আরো অন্যান্য জায়গায় l এরপর কোস্টাল ট্রেকিং এর ভাবনা মাথায় ছাড়া দিলো l তিন জনের দল--কানাইদা, বিশ্বজিৎ ও আমি l সুজিত যেতে পারলোনা l নদী পারাপারের ভয়, চোর ডাকাতের ভয়, পানীয় জল ও রাতের আশ্রয় নিয়ে নানা দুঃশ্চিন্তা l এছাড়া বন্ধুরা বলল বড্ড বেশি একঘেয়েমি হবে l সেদিনকার কানাইদার কথা আজও মনে পড়ে l বলেছিলো---আরে, চোর-ডাকাতের-ও সময়ের দাম আছে..কখন একজন সাগরপাড়ে হাঁটে আসবে তাকে ধরে সব কেড়ে নেবে ! এর থেকে কোনো জনবহুল পথে দাঁড়ালে ওদের অনেক বেশি লাভ l দশ বছর হিমালয়ের প্রত্যন্ত প্রান্তে হাঁটার অভিজ্ঞতা ও মানসিকতায় ভর করে 1982-র জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বেরিয়ে পড়লাম l কোনারক থেকে হাঁটা শুরু করে পুরি হয়ে যাবো চিল্কা হ্রদে...মাত্র পাঁচ দিনের হাঁটা ও নৌকো চাপা...বঙ্গোপসাগরের তটভূমি ধরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেব একথা ভাবতেই দারুন রোমাঞ্চ অনুভব করলাম l ছোট্ট প্রোগ্রাম, অনেক আনন্দ, অনেক বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতা, পাওনাটাও হয়েছিল অনেক l এক বুক আনন্দ ও দরদী মানুষের আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা নিয়ে কলকাতা ফিরে এলাম l ই মনমাতান ভাললাগাকে সঙ্গী করে এরপর প্রতি শীতেই বেরিয়ে পড়েছি সৈকত পদযাত্রায় l এদেশের উপকূল ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছি শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের উপকূলে, ভারতের মূল ভূখণ্ড ছাড়িয়ে ঢুকে পড়েছি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের এক দ্বীপ থেকে আর এক দ্বীপে l বিগত ত্রিশ বছরে সৈকত পদযাত্রায় কখনো ক্লান্তি আসেনি, আসেনি একঘেয়েমি---চোখ ও মন খুঁজে গিয়েছে নতুনত্ব ও বৈচিত্র---একঘেয়েমি নয়, আনন্দ ছিল পদে পদে--সৈকতে হাজার পাঁচেক কিমি হেঁটে অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমেছে অনেক ভাললাগা, অনেক তথ্য l
দীর্ঘ সৈকতে হেঁটেছি বেলাভূমিতে, পাহাড়ি পথে আবার কখনো জলকাদার মধ্য দিয়ে--ডিঙোতে হয়েছে ছোট ছোট পাহাড়, পার হতে হয়েছে কত নদীনালা, ছোটবড় কত নদী পেরিয়েছি ভেলায়, ডিঙি নৌকোয়, বারো নৌকোয়, লঞ্চে আবার কখনো এক কোমর জলে জলে---ম্যানগ্রোভ বনানী ছাড়াও অতিক্রম করেছি পাহাড়ি বনানী...মধ্যগগনে সাগরের জলে নানা বৈচিত্র! নীল, নীলচে সবুজ, ধূসর-নীল, কালচে নীল আবার কখনো গেরুয়া, এক টুকরো ছায়ার জন্য বা বেলাভূমি না থাকার জন্য ঢুকে পড়তে হয়েছে ঝাউবন, কাজুবন, সারি সারি নারকেল বীথির মধ্যে l
পশ্চিমবঙ্গে ও উত্তর উড়িষ্যার বালুবেলায় চলে জোয়ার ভাঁটার লুকোচুরি l আছড়ে পড়া আজলরাশি কখন কাছে, আবার কখনো অনেক দূরে l দক্ষিণ উড়িষ্যা ও উত্তর অন্ধ্র প্রদেশের সৈকতে উত্তাল সমুদ্র l সোনালী বালুবেলা ছুঁয়ে সেখানে সারি সারি ঝাউবীথি l বিশাখাপত্তনমের উত্তরে ও দক্ষিণে প্রায় 100 কিমি জুড়ে পাহাড় ও সোনালী সৈকত পাশাপাশি l পূর্বাঘাট পর্বতমালা থেকে ছোট ছোট স্পর্ এসে মিশেছে সাগরে l গড়ে উঠেছে অর্ধচন্দ্রাকার সৈকত l গোদাবরি-কৃষ্ণা অববাহিকায় নদীনালা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল l জোয়ারের জল কোথাও ঢুকে পরে সেই বনাঞ্চলের মধ্যে l ঝড় জলোচ্ছ্বাসের মত দুর্যোগে এই অঞ্চলের মানুষেরই সবথেকে বেশি ক্ষতি হয় l হতদরিদ্র সহজসরল মানুষের আন্তরিক সান্নিধ্য এখানেই পাওয়া যায় l একে অপরের ভাষা বুঝিনা কিন্তু অন্তরের ভাষা নিয়ে যাই ওদের কাছে l ওদের অন্দর মহলে l তামিলনাড়ুর সৈকতে বিশ্ববাণিজ্যের সাথে ঢুকে পড়েছে পাশ্চাত্য সভ্যতা l ব্যাবসার তাগিদে পর্তুগিজ, ফরাসি, ব্রিটিশেরা এখানে নোঙ্গর গেড়েছিলেন l পাশাপাশি দেশের রাজারাও মন্দির গড়ে তুলেছেন সাগর ছুঁয়ে l কোথাও সেই মন্দির সাগর-বাক্সে কোথাও সৈকতে l বিদেশিরাও পিছিয়ে নেই l গড়ে তুলেছেন একের পর এক বিশালাকার গির্জা l পুষ্পহার, মামলাপুরম, বেদিরানিয়াম, রামেশ্বরম, ত্রিচেন্দুর, কন্যাকুমারী হিন্দু মন্দির, নাগোরের দরগা, নাগিপট্টিনাম ও ট্রাঙ্কাজার্ডর কড়ইকাল এর উপনিবেশ কলোনি সবই রয়েছে এই অঞ্চল জুড়ে l পয়েন্ট কেলিমারের বিস্তীর্ণ জলাজমি জুড়ে bird sanctuary তে দর্শন মেলে হাজার হাজার ফ্লেমিংগো, স্টার্ক সহ বহু ধরণের পাখির l বঙ্গোপসাগর ছুঁয়ে আরো দক্ষিণে গালক অক মান্নার সৈকত l সাগর এখানে শান্ত l সাগরের সৈকত ও জল ছুঁয়ে নারকেল বাগানের ছায়ায় গ্রামের ঘরবাড়ি l
বঙ্গোপসাগর, ভারতমহাসাগর ও আরবসাগর সংলগ্ন কন্যাকুমারী ছাড়িয়ে আরব সাগরের তামিলনাড়ু ও কেরালার তটভূমি l দক্ষিণ কেরালা জুড়ে সংখ্যা খাড়ি l এই অঞ্চলে মানুষের বসবাস বড্ডো বেশি l নারকেল বীথি ও গ্রামের মধ্যে দিয়ে ব্যাক ওয়াটার খাড়ির মাঝে ডিঙি বেয়ে চলাটা বড়ই আনন্দের l বালুবেলার কল জুড়ে রয়েছে বড় বড় গির্জা l উত্তর কেরেলায় বেলাভূমি, ব্যাক ওয়াটার খাড়ির পাশাপাশি পাহাড় রয়েছে সর্বত্রই l পশ্চিমঘাট পৰ্বতমালা থেকে স্পায় নেমে অর্ধচন্দ্রাকার সৈকত ছাড়াও কোথাও কোথাও রয়েছে দুর্ভেদ্য পাহাড় l শুধু এখানেই নয়, কর্ণাটক, গোআ ও মহারাষ্ট্র উপকূলেও পাহাড়ের কোলে ছোট ছোট নদী ও ব্যাকওয়াটার খাড়িগুলি অসাধারণ l কোঙ্কন ও মালাবারের মশলার বাজারের দখল নিতে বিদেশিরা নোঙ্গর গেড়েছেন এই উপকূলে l পা রেখেছেন ভাস্কো-দা-গামা l চার্চ, মন্দির ও মসজিদের পাশাপাশি একের পর এক সঙ্গমস্থলে গড়ে উঠেছিল দূর্গ l শিবাজী ও শম্ভুজির আমলে তৈরী এইসব দূর্গগুলি ছিল বৈদেশিক আক্রমণের মোকাবিলায় সদা-জাগ্রত l এক দূর্গ থেকে আর এক দূর্গ যাবার জন্য উপকূলের পাহাড় টপকে ঘোড়সওয়ারদের জন্য তৈরী হয়েছিল শিবাজীপথ l বিশালাকার বে-এর পাশে পাহাড়ের টিলার ওপর এই দূর্গগুলি থেকে সাগর-বাক্সে দৃষ্টি চলে যায় অনেক দূরে l
ভাষা, বেশভূষা, আচার, ধর্মীয় অনুশাসন, খাদ্যাভ্যাস, ঘরবাড়ির গঠন, নৌকোর গঠনে রয়েছে নানা বৈচিত্র ও সাযুজ্যতা l আকারে ইঙ্গিতে বোঝাতে পেরেছি নিজেদেরকে l প্রাথামিক বিভ্রান্তি কাটিয়ে পরক্ষনেই আপন করে নিয়েছে সৈকত ছুঁয়ে বসবাসকারী নানা ধর্মে বিশ্বাসী মানুষজনেরা l ওদের আতিথেয়তায় স্বাদ পেয়েছি নানা ধরণের খাবারের l কত বিচিত্র সুস্বাদু খাবার --সজনে ফুল দিয়ে হাঙ্গর মাছের ঝোল, পাকা কলার সাথে নারকেল সহযোগে নানা রান্না, আরো কত কি l রাত কাটানোর জায়গা জুটেছে সাইক্লোন সেল্টারে, জেলেদের অস্থায়ী ঝুপড়িতে, স্কুলবাড়ি, গির্জা, মন্দির, মসজিদ, আবার কখনো হোটেলে l আবার কখনো নির্জলা রাট কাটাতে হয়েছে খোলা আকাশের নিচে l
প্রতিবেশী দেশের সৈকতে ট্রেকিং-এর উদ্দেশ্যে ঢুকে পড়েছিলাম বাংলাদেশ ও শ্রীলংকায় l কক্সবাজার থেকে একটানা আশি কিলোমিটার সৈকতপথে টেকলাক l আরাকান পর্বতশ্রেণীর ছোট ছোট পাহাড়ের কল ছুঁয়ে এই উপকূলে বহু মানুষ আমাদের আপন করে নিয়েছে l পেয়েছি বহু কৌতূহলী মানুষের সান্নিধ্য ও আতিথেয়তা l তালিবান ফতোয়াকে উপেক্ষা করেই হেঁটেছি সেন্ট মার্টিন দ্বীপে l বঙ্গোপসাগরের কোলে এই পিতৃভূমিতে হাঁটতে হাঁটতে সর্বদাই একটা নারীর তন্ অনুভব করেছি l
(এর পরে আগামী সংখ্যায় )
[লেখক বিশিষ্ট ভ্রমণ সাহিত্যিক ]
দূষণমুক্ত পৃথিবী গোড়ার লক্ষ্যে সাইকেল চালাও রামপ্রসাদ নস্কর
প্রতিনিয়ত অসংখ্য ডিজেল ও পেট্রোলচালিত যানবাহন চলার ফলে ভূগর্ভে গচ্ছিত সম্পদ আজ নিঃশেষ হচ্ছে l যানবাহনে ব্যবহৃত খনিজ তেল পুড়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনো-অক্সাইড ইত্যাদি ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গত হয়ে বায়ুমণ্ডলে মিশে দূষণ ঘটাচ্ছে l পোড়া তেল, মোবিল ইত্যাদি বৃষ্টির জলের সাথে মিশে পুকুর, খাল, জলাশয়, নদীনালা, সাগর ও মহাসাগরের বাস্তুতন্ত্র-কে দূষিত করে চলেছে l ফলে বিভিন্ন ধরণের রোগ-ব্যাধির আক্রমণে স্থলভাগ ও জলভাগের জীবকূল আজ বিপন্ন l
যানবাহন চলাচল ও উৎকট হর্ন বাজানোর ফলে মানুষ বধির ও খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে, ধৈর্য্যশক্তি হারাচ্ছে l বন্য জীবজন্তু ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে l এছাড়া সূর্য্যের অতি-বেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে আসায় তাপমাত্রার পরিমান দ্রুত-হারে বাড়ছে l ফলে গঙ্গোত্রী হিমবাহের মতো হাজার হাজার হিমবাহ ও মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত-হারে গলছে l সাগর-মহাসাগরের জলের পরিমান দ্রুত-হারে বাড়ছে, প্লাবিত হচ্ছে উপকূলবর্তী অঞ্চল l ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র, মিষ্টি জলের উৎস, তীব্র হচ্ছে জলসঙ্কট l অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অম্লবৃষ্টি, আয়লা, সুনামির মতো ভয়াবহ ঘটনা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে l গাছের সংখ্যা বাড়লে, পৃথিবীর ভারসাম্য অনেকটাই স্থিতিশীল হবে, মুক্তি ঘটবে দূষণ থেকেও l
তেলের পরিবর্তে সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন যান চালানো জরুরি l সেই সঙ্গে যাতায়াতের জন্য সাইকেলের মতো দূষণবিহীন পরিবেশবান্ধব বাহনকে ব্যবহার করতে হবে l তাই বাড়াতে হবে জনসচেতনতা l প্রসঙ্গতঃ, এই সাইকেল নিয়ে সচেতনতা প্রসারের জন্য আমি দেশের প্রতিটি রাজ্যের ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজধানী ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দপ্তরে গেছি এবং সাইকেলেই l ভারত মহাসাগরের রামেশ্বরম বা ভূ-স্বর্গ কাশ্মীর, আরব সাগর তীরে গুজরাটের সোমনাথ মন্দির বা দমন-দিউ, মুম্বাই বা পূর্ব-উত্তরপূর্ব ভারতে কোহিমা-ইটানগর-শিলং----সর্বত্রই গেছি l সঙ্গী সাইকেল l বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান--সবার সাথেই এই নিয়ে মত্ বিনিময় করেছি l এটাই বোঝাতে চেয়েছি যে এই বাহন কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করেনা l জ্বালানি লাগেনা তাই খরচ-ও কম l নিম্ন-বিত্তের মানুষ ছোট ব্যবসায়-ও কাজে লাগান, যেমন পেপার বিক্রি, দুধ বিক্রি, ফেরি করে বিক্রি, মাছ-বিক্রি ইত্যাদি l নিজের সাইকেল থাকলে কারো অপেক্ষায় থাকতে হয়না l শরীর-ও সুস্থ থাকে কারণ এতে শারীরিক প্রক্রিয়া বেশি সচল থাকে l আমার মতে, যে অর্থ গাড়ির জ্বালানিতে ব্যবহার করবেন তা বরং পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য ব্যয় করা ভালো l
পার্বত্য অঞ্চল নিয়েও একই কথা l সেখানেও তৈলচালিত গাড়ি চলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে l ভূমিও ধ্বংসের পথে l পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের মধ্যে-ও তাই সাইকেল নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো চাই l
বিশ্বের দূষিত শহরগুলির মধ্যে কলকাতা প্রথম সারিতে l তাই এই শহরের দূষণ নিয়ে ভাবার ও করার সময় এসে গেছে l শহরে যে সব খাস জমি আছে সেখানে গাছপালার ঘনত্ব বাড়াতে হবে এবং রাজপথে নিরাপদে মানুষ যাতে সাইকেল ব্যবাহার করতে পারেন তার ব্যবস্থা করাও জরুরি l
আমরা সবাই দেখি পায়ে চলার পথ ফুটপাথের ওপর নিয়তই মানুষজন গুটখা, পানের পিক ইত্যাদি ফেলে শুধু নোংরাই করছেন তা নয় এগুলো ফুটপাথের পাথর বা সংলগ্ন দেওয়ালের সাথে রাসায়নিক ক্রিয়ায় ক্ষতিও করছে l দুই থেকে দশ-বিশ চাকার গাড়ি চলার জন্য আছে পঞ্চাশ-ষাট ফুটের চওড়া রাস্তা l দৈত্যাকৃতির নানা গাড়ি থেকে নির্গত দূষিত পদার্থ বায়ুমণ্ডল তো বটেই মানুষের ফুসফুসকেও দূষিত করছে l বাড়ছে রোগের প্রাদুর্ভাবও l হাঁপানি, ক্যান্সার ইত্যাদি মারণব্যাধি বাসা বাঁধছে দেহে l ফল অবধারিত মৃত্যু বা জীবন্মৃত দশা l অথচ পরিবেশ-বান্ধব সাইকেলের জায়গাটুকু নেই !
তাই কলকাতা সহ যে বিশ্বের যে সব শহরের রাস্তায় সাইকেল চালানোয় নিষেধাজ্ঞা আছে সেখান থেকে তা অবিলম্বে তুলে নেওয়া উচিত l পথের একটা প্রান্ত সাইকেল-যাত্রীদের জন্যই রাখা উচিত l পাশাপাশি, প্রযুক্তির উন্নয়ণ ঘটিয়ে সৌরশক্তিচালিত জনগুলিকে দ্রুতগতিসম্পন্ন করার ব্যবস্থা করা উচিত l
ইয়েতি আছে কি? কঙ্কন কুমার রায়
প্রায় সাত দশক আগের সময়ের ঘটনা l সারা দুনিয়া জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল রহস্যময় এক গল্পের উৎস l এই গল্পের কতটা বাস্তব আর কতটা অবাস্তব এই নিয়ে সারা দুনিয়া জুড়ে আজও চলে আসছে ক্রমাগত জল্পনা-কল্পনা l
গল্পের উৎস--হিমালয়ের অতি উচ্চতায় যেখানে তুষারের রাজত্ব, সেখানে তুষারের ওপর কিছু পায়ের ছাপ l এই পায়ের ছাপ কিসের? এগুলি কাদের? কেনই বা তা শুধুমাত্র বরফের হিমশীতল রাজত্বে বিচরমান এই নিয়ে সারা দুনিয়া জুড়ে মানুষের মনে সৃষ্টি হয়েছে এক অলীক কল্পনা জগৎ l
হিমালয়ের গোপন অন্দরে, তুষারের বুকে এই পায়ের ছাপের অধিকারীদের নিয়ে চলে আসছে অনেক রূপকথার গল্প l পাহাড়ি মানুষের মতে হিমালয়ের গোপন অন্তঃপুরের বাসিন্দাদের এই পায়ের ছাপের অধিকারীরা হল তুষার-মানব l ইংরেজিতে তুষার-মানবের নাম snow -ম্যান বা abominable snow man , নেপালে বলে 'ইয়েতি' l 'ইয়েতি' তিব্বতি শব্দ ---'ইয়ে' মানে পাহাড় আর 'তি' মানে মানুষ, অর্থাৎ পাহাড়ের মানুষ l তিব্বতে এর আরও একটি প্রচলিত নাম আছে --'টেমু' l
সারা হিমালয় জুড়ে তুষার মানব রূপকথার প্রচলন থাকলেও এই তুষার মানবকে নিয়ে বেশি ভাবনা চিন্তা, জল্পনা-কল্পনা কিন্তু হিমালয়ের একটি বিশেষ অঞ্চলের মধ্যেই এতদিন সীমাবদ্ধ ছিল l তা হল নেপাল হিমালয় এবং বিশেষ করে এভারেস্ট শিখরের পাদদেশ অঞ্চল l এই অঞ্চলে প্যাংবোচে মনেস্ট্রিতে শতাব্দীকাল ধরে সযত্নে রক্ষিত আছে একটি মাথার খুলি l লামাদের বিশ্বাস এটি তুষার-মানবের l বর্তমানে নুতন অঞ্চলের খাবার পাওয়া যাচ্ছে l
1951 সালে ব্রিটিশ পর্বতারোহী এরিক শিপটন এভারেস্টের দক্ষিণ দিকের পথ খুঁজতে গিয়ে দেখতে পেয়েছিলেন তুষার মানবের পদচিহ্ন l তাঁর তোলা ছবি দেশ-বিদেশের পাত্র-পত্রিকায় বের হওয়ার পরই দুনিয়ার মানুষ জানতে পারেন হিমালয়ের গোপন পুরের অজানা অলীক কল্পনার এক মানব-কুলের কথা l
বিশ্বের কৌতূহলী মানুষের অনুসন্ধিৎসু মনে জাগে এক জিজ্ঞাসা---সত্যি-ই কি তুষার-মানবের অস্তিত্ব আছে? বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানী দল তাই এগিয়ে আসেন সত্যানুসন্ধানে l অগ্রণী ভূমিকায় অবশ্যই ছিলেন ইউরোপিয়নরা l দল পরিচালনায় থাকেন দুনিয়ার নাম করা সব সেরা পর্বতারোহীরা l এইরকম দুটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এডমন্ড হিলারি ও ক্রিস বোনিংটন l গর্বের কথা যে হিলারির দলে একজন বাঙালি পর্বতারোহীও স্থান পেয়েছিলেন--ভানু ব্যানার্জি, সেই বিখ্যাত পর্বতারোহী যিনি 1962 সালে গাড়োয়ালের 'নীলগিরি' শিখরে আরোহন করেছিলেন l আরও মজার কথা হলো এই যে 1951 সালে প্রথম যিনি ইয়েতির পদচিহ্নের ছবি তুলেছিলেন অর্থাৎ এরিক শিপটন, তাঁর দলেও ছিলেন এক বাঙালি ভূ-বিজ্ঞানী গোপেন্দ্রনাথ দত্ত l এই অনুসন্ধানী দলগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান করেও কিন্তু ইয়েতি বা তুষার মানবের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিশেষভাবে কোনো আলোকপাতই করতে পারেননি l
হিলারি সাহেব প্যাংবোচে মনেস্ট্রিতে রাখা মাথার খুলিটিকে নিয়ে গিয়েছিলেনইংলান্ডে l ডি এন এ পরীক্ষায় জানা যায় যে অতি এক জাতীয় এটিকে ভালুকের মাথার খুলি l ব্যাস, প্যাংবোচে মনেস্ট্রির ওই অধ্যায় ওখানেই শেষ l
(এর পরে আগামী সংখ্যায়)
[লেখক পশ্চিমবঙ্গ মাউন্টেনিয়ার্স ও ট্রেকার্স কনফেডারেশনের সভাপতি]
সিঙ্গালিলার যাত্রাপথে
মানস কুমার হালদার
আমাদের এই জীবনযাপনের মধ্যেই খোঁজার চেষ্টা করি প্রকৃতিকে, চেষ্টা করি কিছু স্বাদ গ্রহণের, রহস্য উদ্ঘাটনের l আর তার মাধ্যম হিসাবে আমাদের ইনস্টিটিউট অফ এক্সপ্লোরেশনের কাছে কৃতজ্ঞ l
বেরিয়ে পড়লাম সামার ট্রেক-এl আমাদের যাত্রাপথ ছিল ওখড়ে থেকে ফালুট-সিঙ্গালিলা টপ l
28 মে আমরা যাত্রা শুরু করি l সকল 09.05 মিনিটে ঠিক সময়েই ছাড়লো হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস l ট্রেনেই প্রাতঃরাশ সারলাম সবাই l আমরা মোট 11 জন ছিলাম l আর একসাথে গেলে যে মজা ও হই-হুল্লোড়---তাও ছিলই l দুপুরের খাওয়াও ট্রেনেই l
একটু দেরিতেই নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছালাম l তখন সন্ধ্যা 07.30 l যে যার জিনিসপত্র ও সমস্ত মালপত্র ঠিকঠাক দেখে নিয়ে নামলাম l কেউ কেউ আবার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সেলফি-ও তুললো l তারপর ওখান থেকে অটো -ট্রেকার যোগে শিলিগুড়ি l ওখানে হোটেলে-এ রাত্রিবাস l ট্রেন দেরির জন্য জায়গা পেতে অসুবিধাও হয়েছিল, অবশেষে এই হোটেল l সেখানে মালপত্র রেখে রাতের খাওয়া --চিকেন কষা, ডাল, সবজি ইত্যাদি l ক্লান্তির পর বেশ তৃপ্তি লাগছিলো এতে l আমাদের সাধারণ সম্পাদক নবিদার কথামতো সাড়ে এগারোটায় হোটেলের মধ্যেই পরদিনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা সেরে শুভরাত্রি জানিয়ে বিছানা নিলাম l
পরদিন অর্থাৎ 29 মে l রিপোর্টিং টাইম ছিল ভোর পাঁচটা l যথাসময়ে উঠে পড়লাম l নিজেদের ব্যবস্থা মতো সবাই বেড টি নিলাম l কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় যথাসময়ে বেরোতে পারছিলামনা l বেরোবার সময় ছিল সকাল ছটা, কিন্তু বৃষ্টির জন্য সম্ভব হয়নি l অবশেষে আটটা নাগাদ বের হলাম জোড়থাং-এর উদ্দেশ্যে l ততক্ষণে একটু বৃষ্টি কমেছে l সেবক রোড অৰ্থাৎ 10 নং জাতীয় সড়ক ছাড়িয়ে বুঝতে পারলাম আমরা সমতল ছেড়ে ধীরে ধীরে উপরের দিকে অগ্রসর হচ্ছি l জোড়থাং-এর পথে যেতে যেতে আমরা মিলিটারি ক্যাম্প, বেশ ক্যাম্প, সেবক ব্রিজ, তিস্তা ব্রিজ, তিস্তা নদী প্রভৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেলাম l বেলা পৌনে একটায় জোড়থাং পৌঁছে গেলাম l ছোট্ট শহর l পরিকাঠামো ও পরিচ্ছন্নতায় মুগ্ধ হলাম l আমাদের নিত্যদিনের বাঙালি খাবারের থেকে এখানে রেস্টুরেন্ট-এ যা খেলাম দুপুরে তা সম্পূর্ণ আলাদা স্বাদের , কিন্তু দেরি করার উপায় ছিলোনা, তাই গাড়ির ব্যবস্থা করে বেলা দেড়টার পরেই বেরিয়ে পড়লাম ওখরের উদ্দেশ্যে l
(এর পরে আগামী সংখ্যায়)
সাম্প্রতিকী
দ্য ইনস্টিটিউট অফ এক্সপ্লোরেশন-এর 47 তম শৈলারোহণ শিক্ষা শিবিরের সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হল কলকাতার বাংলা একাডেমি সভাগৃহে l গত 12 জুলাই আয়োজিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন ইনস্টিটিউটের সভাপতি দুর্গাদাস সাহা l পশ্চিমবঙ্গ মাউন্টেনিয়ারিং ও এডভেঞ্চার স্পোর্টস ফাউন্ডেশন-এর উপদেষ্টা বিশিষ্ট পর্বতারোহী উজ্জ্বল রায়, পশ্চিমবঙ্গ মাউন্টেনিয়ার্স ও ট্রেকার্স কনফেডারেশন এর সম্পাদক প্রশান্ত মণ্ডল, ইনস্টিটিউট এর সহ-সভাপতি অসিত রায়, 'চলো যাই' পত্রিকার সম্পাদক সুবীর ভট্টাচার্য, ভ্রমণ সাহিত্যিক রতনলাল বিশ্বাস প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন l
প্রসঙ্গতঃ, এ-বছর 1-4 ফেব্রুয়ারী বাঁকুড়া জেলার শুশুনিয়া পাহাড়ে ইনস্টিটিউট চার দিনের শৈলারোহণ প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজন করে l বেসিক,স্ট্যান্ডার্ড ও অ্যাডভান্স--- এই তিন বিভাগ মিলিয়ে মোট 99 জন প্রশিক্ষণ নেন l এদিন 92 জন প্রশিক্ষাৰ্থী উপস্থিত হয়ে শংসাপত্র গ্রহণ করেন l কুনাল দে (পুরুষ) ও পৌলমী নন্দী (মহিলা) -কে সেরা প্রশিক্ষার্থীর সম্মান দেওয়া হয় l ইনস্টিটিউট-সদস্য অভিজিৎ বসু ও দেবাশীষ আচার্য এদিন হিমালয়ের রুপিন পাস্ ট্রেকিং-এর স্লাইড প্রদর্শন করেন l
হিমদ্যুতি
আবির্ভাব সংখ্যা, ১৮ মে, ২০১৬; ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৩, বুধবার
যুগ্ম সম্পাদক : ডা: অটল কুমার হাটি, দীপ্তেশ মণ্ডল
সম্পাদকমন্ডলী :
সর্বশ্রী দূর্গাদাস সাহা, সভাপতি, দ্য ইনস্টিটিউট অফ এক্সপ্লোরেশন
এম. নবী তরফদার, সাধারণ সম্পাদক, দ্য ইনস্টিটিউট অফ এক্সপ্লোরেশন,
এম. নবী তরফদার, সাধারণ সম্পাদক, দ্য ইনস্টিটিউট অফ এক্সপ্লোরেশন,
শ্রীমতি আরতি দে,
অসিত কুমার রায়,
সৌমিত্র সাহা,
দীপ্তেশ মণ্ডল,
অভিজিত বসু,
দেবাশীষ আচার্য্য
সম্পাদকীয়
হিমদ্যুতি—সাড়ে চার
দশক আগে জাতীয় রণশিক্ষাবাহিনীর (NCC) সদ্যপ্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গড়া
The Institute of Exploration এর চলার
পথে আর একটি মাইলফলক। হিমদ্যুতি—সেদিনের
সেই স্বপ্নচারী পথিকৃত আর আজকের প্রজন্মের সেতু। হিমদ্যুতি—হিমালয়ের ভয়ংকর সুন্দরের স্পর্শ অনুভূতি থেকে শুরু করে 'সাগর ছুঁয়ে
পায়ে পায়ে' চলার অভিজ্ঞতা ভাগ করে
নেওয়ার নান্দনিক মাধ্যম। ‘হিমদ্যূতি’ অর্থে বা অর্থান্তরে চন্দ্র বা অনন্ত তুষারদেশের বর্ণময় দ্যূতি যা আমাদের অভিযানে রাত্রিদিনের শ্রান্তি ঘোচায়। গত কয়েকমাস ধরে চলা পরিকল্পনা, লেখকদের সাথে যোগাযোগ, লেখাসংগ্রহ, নামকরণ
ইত্যাদি বিবিধ পথ অতিক্রম করে তার সূচনা ভরা গ্রীষ্মে, ইংরেজি
ক্যালেন্ডার-হিসাবে ১৮মে, ২০১৬ তারিখে। মে মাস--- হিমালয় বিশেষ করে এভারেস্ট
এর জন্য সব থেকে তাত্পর্যের মাস । কে-না জানে
কিংবদন্তি তেনজিং নোরগের পৃথিবীতে আসা, যাওয়া এবং স্যার হিলারির
সাথে পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দুতে আরোহন—সবই এই মাসে? ১৯৫৩’র
২৯ মে’র সেই ইতিহাস এর হীরকজয়ন্তী বর্ষে ২০১৩’র ১৮ মে আমাদের ছন্দা গায়েন আরোহন করেন
এভারেস্ট শীর্ষে। প্রথম সফল এভারেস্ট অভিযানের ১০০ বছর আগে ১৮৫৩ তে গণিতবিদ রাধানাথ শিকদার সর্বোচ্চ শৃঙ্গের উচ্চতা নিরুপন করেন ---ডি রোজিও'র এই সুযোগ্য বাঙালি ছাত্র ১৭ মে (১৮৭০) তারিখে ইহলোক ত্যাগ করেন.
আবির্ভাব
সংখ্যা হিসাবে কিছু অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হয়ত থাকবে তবু ইনস্টিটিউট এর বিভিন্ন প্রজন্মের
সদস্য এবং আমন্ত্রিত লেখকদের কাছে যে সাড়া পেয়েছি তাতে হিমদ্যুতির যাত্রাপথ দ্যুতিময়
হয়ে উঠবে বলেই দৃঢ় বিশ্বাস।দেয়াল থেকে খুব শীঘ্রই লেখাগুলি প্রবেশ করবে বৈদ্যুতিন সংস্করণে (e -edition ), আগামীদিনে প্রকাশিতব্য পত্রিকার মূল উপাদান হবে এই সব লেখার-ই নির্বাচিত
অংশ।
আবির্ভাব-লগ্নে হিমদ্যুতি
সবাইকে জানায় আন্তরিক শুভকামনা, পাশাপাশি ইনস্টিটিউট-এর
ঠিকানায় বা বৈদ্যুতিন ঠিকানায় (e mail ) সবার শুভেচ্ছা ও মতামতপ্রার্থী
হিমদ্যুতি ।
শুভেচ্ছাবার্তা:---
সৃষ্টিসুখের উল্লাসে
মনের আবেগ অনুভূতিকে প্রকাশ করতে আদিম গুহামানব বেছে নিয়েছিল গুহাকন্দরের পাথুরে দেওয়াল I লিপি আবিষ্কারের আগেই সেখানে উদ্ভাসিত হয়েছিল আদিমানবের সৃষ্টির উল্লাস I তবে এ চিত্রাঙ্কন যে তারা সৌন্দর্য সৃষ্টির তাগিদেই করেছিল অবশ্যই তা নয়, এর পিছনে ছিল অনিশ্চিত জীবনধারণের উপকরণের সহজপ্রাপ্ততার প্রার্থনায় তুকতাক, জাদুর প্রতি তাদের অন্ধ বিশ্বাস I
সেই গুহাজীবনের অনেক পরে সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে দেওয়াল লিখনের সেই পরম্পরাকে বয়ে নিয়ে এসে মানুষ একসময় জন্ম দিল দেওয়াল পত্রিকার I কিন্তু যান্ত্রিক সভ্যতায় মুদ্রণ জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসার সাথে সাথে অস্তমিত হ'ল দেওয়াল পত্রিকার সুদিন I দেওয়াল পত্রিকাকে কেন্দ্র করে একসময় গড়ে ওঠা স্রষ্টামন্ডলী মুখ ঘুরিয়ে নিল অবজ্ঞায় --এ আমার নিজের অভিজ্ঞতা I
দ্য ইনস্টিটিউট অফ এক্সপ্লোরেশনের উত্সাহী সদস্যরা তাঁদের দেওয়াল-পত্রিকা ‘হিমদ্যুতি’ প্রকাশের সংবাদ দিয়ে আমাকে আমার ফেলে আসা জীবনের হারানো স্মৃতি ফিরিয়ে দিল I
আশা করব তাঁদের এ প্রচেষ্টা সফল হবে, সুন্দর হবে নবজাতকের জন্ম-মুহুর্তে রইলো আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা II
আশা করব তাঁদের এ প্রচেষ্টা সফল হবে, সুন্দর হবে নবজাতকের জন্ম-মুহুর্তে রইলো আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা II
সুবীর ভট্টাচার্য
(লেখক ভ্রমন ত্রৈমাসিক 'যারা যাযাবর' পত্রিকার সম্পাদক)
৪৭তম শৈলারোহণ প্রশিক্ষণ শিবির
---দেবাশীষ আচার্য্য
বাঁকুড়া জেলার ছাতনা রেল
স্টেশন থেকে ১০ কিমি দূরে শুশুনিয়া পাহাড়ে অনুষ্ঠিত হ'ল দি ইনস্টিটিউট অফ
এক্সপ্লোরেশন
এর ৪৭তম শৈলারোহন প্রশিক্ষণ শিবির ১-৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬ I রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে মোট
৯৯ শিক্ষার্থী এতে
অংশ নেন, এর
মধ্যে এর মধ্যে ৭৮
জন বেসিক, ১৭ জন
স্ট্যান্ডার্ড
ও ৪ জন
'মেথড অফ ইন্সট্রাকশন' বা
'এম ও আই'
বিভাগেI প্রশিক্ষণ হয় ৪৬ জনপ্রশিক্ষক ও
পদাধিকারীর তত্বাবধানেI সংস্থার সভাপতি তথা
Camp Commandant দুর্গাদাস সাহা ইনস্টিটিউটএর পতাকা উত্তোলন করে
আনুষ্ঠানিক সূচনা করেনI
১৮
জুন, ২০১৪ সংস্থার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ক্রিক রো
ধরে শিয়ালদহ আসার পথেI সংস্থার
নামাঙ্কিত বোর্ড দেখে নিতান্ত অপ্রত্যাশিতভাবেই প্রবেশ The Institute of Exploration-এর ৪১, ক্রিক রো'র বাড়িতে I সেই প্রথম ভালো লাগা, সদস্যদের সঙ্গে আলাপ, নিয়মিত যাতায়াতের শুরু এবং সংস্থার বিবিধ কর্মকান্ডের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া I গত বছর সংস্থার তত্বাবধানে বেসিক কোর্স করার পর এবার আমি ছিলাম স্ট্যান্ডার্ড এর প্রশিক্ষার্থী I চারদিন সময়ের স্বল্প পরিসরেও শৈলারোহণ এর প্রারম্ভিক শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ-দান পদ্ধতি শিক্ষা (এম ও আই) ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ কঠোর নিয়মানুবর্তিতায় ও শৃঙ্খলাপরাযনতায় I
নামাঙ্কিত বোর্ড দেখে নিতান্ত অপ্রত্যাশিতভাবেই প্রবেশ The Institute of Exploration-এর ৪১, ক্রিক রো'র বাড়িতে I সেই প্রথম ভালো লাগা, সদস্যদের সঙ্গে আলাপ, নিয়মিত যাতায়াতের শুরু এবং সংস্থার বিবিধ কর্মকান্ডের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া I গত বছর সংস্থার তত্বাবধানে বেসিক কোর্স করার পর এবার আমি ছিলাম স্ট্যান্ডার্ড এর প্রশিক্ষার্থী I চারদিন সময়ের স্বল্প পরিসরেও শৈলারোহণ এর প্রারম্ভিক শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ-দান পদ্ধতি শিক্ষা (এম ও আই) ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ কঠোর নিয়মানুবর্তিতায় ও শৃঙ্খলাপরাযনতায় I
মূলশিবির থেকে ৪৫
মিনিট হেঁটে স্বল্প চড়াই উতরাই পাহাড় জঙ্গলের পথ
ধরে শুশুনিয়ার প্রশিক্ষণস্থলের উদ্দেশ্যে সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে চলা I ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষকদের সহায়তা, নির্দেশ
ও নজরদারিতে চলে শৈলারোহনের বিভিন্ন কলাকৌশল শিক্ষা--Rock Climbing, Rappelling, Casualty Rescue, Camping ইত্যাদি I দিনান্তে মূল শিবির প্রত্যাবর্তন কখনও ভিন্ন পথে আরও
গহনে শুশুনিয়া ঝরনা পথ ধরে, কখনোবা প্রত্যুষে মূল শিবির থেকে প্রশিক্ষণের শিবিরের উদ্দেশ্যে
যাত্রা অরণ্যপথে ইতিহাসের সরণী বেয়ে রাজা চন্দ্রবর্মনের সমসাময়িক অক্ষত শিলালিপির নিবিড়
অরণ্যানীর সাম্রাজ্যে I সন্ধ্যায় মূল শিবির প্রাঙ্গনে চলে তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ I শিক্ষার্থীদের অবহিত করা হয় পাহাড় পথে চলার বিবিধ নিয়ম, নীতি ইত্যাদি (যথা Camp Hygiene, First Aid, Mountain Manners, Hazards) সম্বন্ধে শিক্ষার্থীরা পরিচিত হয় বিবিধ Rock terminology র সাথে I দিনের শুরু থেকে শেষ---প্রশিক্ষণ চলে নিয়মের গন্ডিতে, সময়ের নিয়ন্ত্রণে I
ও নজরদারিতে চলে শৈলারোহনের বিভিন্ন কলাকৌশল শিক্ষা--Rock Climbing, Rappelling, Casualty Rescue, Camping ইত্যাদি I দিনান্তে মূল শিবির প্রত্যাবর্তন কখনও ভিন্ন পথে আরও
গহনে শুশুনিয়া ঝরনা পথ ধরে, কখনোবা প্রত্যুষে মূল শিবির থেকে প্রশিক্ষণের শিবিরের উদ্দেশ্যে
যাত্রা অরণ্যপথে ইতিহাসের সরণী বেয়ে রাজা চন্দ্রবর্মনের সমসাময়িক অক্ষত শিলালিপির নিবিড়
অরণ্যানীর সাম্রাজ্যে I সন্ধ্যায় মূল শিবির প্রাঙ্গনে চলে তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ I শিক্ষার্থীদের অবহিত করা হয় পাহাড় পথে চলার বিবিধ নিয়ম, নীতি ইত্যাদি (যথা Camp Hygiene, First Aid, Mountain Manners, Hazards) সম্বন্ধে শিক্ষার্থীরা পরিচিত হয় বিবিধ Rock terminology র সাথে I দিনের শুরু থেকে শেষ---প্রশিক্ষণ চলে নিয়মের গন্ডিতে, সময়ের নিয়ন্ত্রণে I
সংস্থার সফল
অভিযানের বিভিন্ন শৃঙ্গের নামে এবারের শিবিরের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন তাঁবুর নামকরণ করা
হয়, যেমন মাউন্ট ফ্লুটেড, মাউন্ট থেলু, মাউন্ট গ্যাঙ স্ট্যাঙ, মাউন্ট যোগিন-১,
মাউন্ট
যোগিন-৩, মাউন্ট চন্দ্রভাগা-১৩ (সিবি ১৩) ইত্যাদি I এছাড়া ৩টি আট হাজারী শৃঙ্গের নামে নামাঙ্কিত ৩টি তাঁবু, যথা-মাউন্টএভারেস্ট, মাউন্ট-কাঞ্চনজঙ্ঘা, মাউন্ট লোত্সেI
যোগিন-৩, মাউন্ট চন্দ্রভাগা-১৩ (সিবি ১৩) ইত্যাদি I এছাড়া ৩টি আট হাজারী শৃঙ্গের নামে নামাঙ্কিত ৩টি তাঁবু, যথা-মাউন্টএভারেস্ট, মাউন্ট-কাঞ্চনজঙ্ঘা, মাউন্ট লোত্সেI
এম ও আই বিভাগে সব থেকে আকর্ষনীয় ছিল দুর্গম পাহাড়ি পথে শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী করার প্রশিক্ষণ পদ্ধতি যার পোশাকি নাম Night Out I শুশুনিয়া পাদদেশে শিবিরের চৌহদ্দির বাইরে একটু ঘন জঙ্গলের মধ্যে এর আয়োজন করা হয় I স্ট্যান্ডার্ড এর শিক্ষার্থীদের সেখানে রাতে নিয়ে যাওয়া হয় I এম ও আই শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ব্যাখ্যা করেন এই বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা I পাহাড় পথে চলতে গিয়ে প্রয়োজনে নিজেদের খাদ্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, নিজেদের অস্থায়ী বাসস্থানকে হিংস্র বন্যপ্রাণীর থেকে সুরক্ষিত রাখা, জঙ্গলের তাঁবুস্থল সম্বন্ধে অন্যদের ওয়াকিবহাল রাখা--এসব এসব পদ্ধতি ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন এম ও আই প্রশিক্ষার্থীরা I
শুশুনিয়া ঝরনা-সংলগ্ন আশ্রম ও
শুশুনিয়া বাজারের কাছে দু'দিনের দাতব্য চিকিত্সা শিবির ছিল
এবারের শিবিরের অন্যতম অঙ্গ I এর
পারিচালনায় ছিলেন ইনস্টিটিউট এর
বরিষ্ঠ সদস্য ডা: অটল
কুমার হাটি I ৫ সদস্যের মেডিকেল টীম
২ দিনে ২৬০
জনকে বিনা খরচে চিকিত্সা করে
ঔষধ বিতরণ করেন I স্থানীয় ঝরুপ্রাসাদ দত্ত সহ
এলাকার মানুষ এতে সহযোগিতা করেন
শিবিরের
তৃতীয় সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত
হয় Camp Fire I মূল শিবির
প্রাঙ্গনে এই
আয়োজন সর্বতভাবেই
উপভোগ্য হয়ে ওঠে প্রশিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নান্দনিক উপস্থাপনা এবং কলাকুশলী প্রদর্শনীর মাধ্যমে I শিবিরের শেষ দিন আয়োজিত হয় শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক ও ব্যাবিহারিক প্রশিক্ষণের মূলপর্ব I . এই পর্বের শেষে ইনস্টিটিউট এর সাধারণ সম্পাদক এম নবী তরফদার ও কোর্স এর ‘ডিরেক্টর অফ ফিল্ড ট্রেনিং’ অর্ধেন্দুশেখর নস্কর শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান I পরিশেষে ইনস্টিটিউট এর সভাপতি তথা শিবিরের এর অধ্যক্ষ দুর্গাদাস সাহা শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে এবারের শিবিরের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন I
উপভোগ্য হয়ে ওঠে প্রশিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নান্দনিক উপস্থাপনা এবং কলাকুশলী প্রদর্শনীর মাধ্যমে I শিবিরের শেষ দিন আয়োজিত হয় শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক ও ব্যাবিহারিক প্রশিক্ষণের মূলপর্ব I . এই পর্বের শেষে ইনস্টিটিউট এর সাধারণ সম্পাদক এম নবী তরফদার ও কোর্স এর ‘ডিরেক্টর অফ ফিল্ড ট্রেনিং’ অর্ধেন্দুশেখর নস্কর শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান I পরিশেষে ইনস্টিটিউট এর সভাপতি তথা শিবিরের এর অধ্যক্ষ দুর্গাদাস সাহা শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে এবারের শিবিরের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন I
এডভেঞ্চার পিপাসু, প্রকৃতিপ্রেমী কিছু প্রাক্তন এন সি সি ক্যাডেটস-এর হাত ধরে ১৯৭১ এর ৯ ফেব্রুয়ারী যে সংস্থার পথ চলা শুরু, যে ছোট্ট চারাগাছটির বীজ রোপিত হয়েছিল কিছু পরিশ্রম ও স্বপ্নচারী উদ্যমকে পাথেয় করে, বহু পথ চলার পর পর
তাঁদের সেই পরিশ্রম, সেই স্বপ্ন, সেই সাধনায় ছোট্ট চারাগাছটি আজ মহীরূহ-প্রায়. ৪১, ক্রিক রো-য়
সংস্থার ছোট্ট বাড়িতে স্মৃতি বিজড়িত হয়ে আছে অজানা দুর্গম পথের রোমহর্ষক বহু কাহিনী
II
আরোহণ সঙ্গীত (Climbing Song)
---দীপ্তেশ মণ্ডল
---দীপ্তেশ মণ্ডল
হও Climbing এ ধীর হও Rappelling এ বীর
রও
Bellayig এ স্থির নাহি ভয়
ভুলিওনা
কোনো
Call ভুললেই
হবে
Fall
হারায়ওনা
মনবল
হবে
জয় II
IOE-র Training এতে নেই কোনো ভুল কোথা ও পাবেনা ফাঁকি খুঁজে এক চুল
Face এ গিয়ে ফেঁসে গিয়ে হও যদি ঝুল
U grade মিলিবে
নিশ্চয় II
প্রথম দিনেতে কর Freehand Climbing কিছু নয় কিছু নয় শুধু Bouldering
দ্বিতীয়
দিনের
থেকে
রোপ
বেঁধে
নিন
Lifeline সবে যারে কয় II
Rappelling-এতে যিনি Rope না নেবেন ‘জ্ঞানেশ’ রেকর্ড বুকে সে নাম পাবেন
‘No-bail prize’ তারে দেবে সুইডেন
নবগ্রহে
জাগিবে
বিস্ময় II
রাত পোহালেই ঘরে ফিরিব যে যার এর পরে কবে দেখা হবে বল আর
স্মৃতি
সে তো হয়ে যাবে এই Camp Fire
Camp Fire এ আনন্দ অক্ষয় II
হও Climbing এ ধীর হও হও Rappelling এ বীর
রও
Bellaying এ স্থির নাহি ভয়
ভুলিওনা
কোনও
Call ভুললেই হবে fall
হারায়ওনা
মনবল
হবে
জয় II
[শুশুনিয়াতে ২০০১এ ইনস্টিটিউট এর ৩১তম শৈলারোহন শিবিরে Camp Fire উপলক্ষে লিখিত ও প্রথমবার উপস্থাপিত]
সাগর তটে স্মৃতির খোঁজে
---এম. নবী তরফদার
পাঁচ জোড়া পা, একাত্ম হৃদয়, অচেনা পথের সাথী
পাঁচ জোড়া চোখে ভাসে বারে বারে নীলাভ জলের ফেনাI
ধু-ধু বালুরাশি, পাশে ঝাউ-বন , মধ্য-গগনে রবি,
নেই কোলাহল, শ্রান্ত মনে ঢেউ-এর হাতছানি
দূর আকাশে শেষ সাগরের ছোঁয়া,
নীল আকাশে পক্ষীরাজে সাদা মেঘের দল,
অশান্ত সাগর, নি:শর্ত সমর্পন, সাগর তটের কাছে,
শুকনো তটে ভেজা জলছবি তার-ই শেষ তুলির টানে I
ভাবনাগুলো উড়ো-খই সম ভাসে,
পাখনা মেলে উড়ে যায়, বারে বারে ফিরে আসে,
এক বসন্তে তুমি ছিলে দুরে, ভেবেছিলাম,
হাঁটবো তোমার পাশে পাশে, তোমার হৃদয় ছুঁয়েI
সাগর তুমি ভীষণ ভীষণ জেদী,
কাছে টান, আপন কর বারে বারে,
আমি আসি ফিরে-- আসি তোমার আরও কাছে,
হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি ফিরিয়ে নেব বলেI
শেষ বিকেলে ‘সীগালরা’ যখন নীড়-এর পথ ধরে
তখন ভীষণ ইচ্ছে করে ঘুমিয়ে পড়ি তোমার আঁচল তলে
শেষ সূর্যের অন্তিম আলো একটা দিনের শেষ,
ক্লান্ত শরীর এলোমেলো পায়ে হাঁটতে থাকি তোমার ধারে ধারে,...
জ্যোত্স্না রাতে তোমার রূপে মুগ্ধ হয়ে যায়
অসংখ্য সফেদ ফেনায় আলো আঁধারির খেলা,
ভুলে যায় তট জুড়ে পড়ে থাকা মৃত কচ্ছপের স্তুপ,
অকাল মৃত্যু মানুষের হাতে --নেই প্রতিকার , দিনে রাত্রের আঁধারI
ভারাক্রান্ত মনে চলেছি সমুখ পানে,
অবুঝ মানুষের অটহাসি ---প্রকৃতির শেষ প্রহর বুঝিবা আসন্ন !
আর হয়ত কিছুটা পথ বাকী,
এ-যাত্রায় 'সাগর' তোমার সঙ্গে আর কিছুক্ষণ আছি ...
ধীর পায় খুঁজেছি ভোরের পথে ,
দুপুর গড়িয়ে গোধুলি পরে এখন রাতের তটে,
নাহ ..পেলামনা তো খুঁজে,
"স্মৃতির" পদচিহ্ন, ভিজে বালিতে হয়ত আবার হারিয়ে গেছে !
শুনেছি তুমি সবকিছুই ফিরিয়ে দাও,
তোমার দিগন্ত বিস্তৃত তটের মাঝে , কোথাও না কোথাও পাব খুঁজে ,
আবার ফিরব, খুঁজবো স্মৃতির ছাপ
এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে , আধ-ভেজা অসংখ্য বালুকণা মাঝে,
ফিরে পেতে, কাছে পেতে তোমায় হে বন্ধু
হাঁটবো ধীর পায়ে , সমুদ্র সৈকতে
হবে দেখা বালুকা বেলায়, কোনো এক বৃষ্টি-ঝরা দিনে,
দিওগো আমায় স্মৃতি আর ভালবাসা, রাখব যতনে,
স্মৃতির অন্তরালে...
চারণিক মন
-----অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল
জানিনা কোন ভালবাসার টানে, অচেনারে চেনার আকর্ষণে
অজানাকে জানতে মনে প্রাণে নূতন দিগন্তের অন্বেষণে ---
চারণিক মন ছুটে যায় প্রকৃতির কোলে,
বলিষ্ঠ পদ-যুগলের ছন্দে ও তালে ,
উত্তঙ্গ গিরি, কান্তার মরু, সৈকত, জঙ্গলে---
বারে বারে তাই ছুটে চলে যাই সব বাধা পিছে ফেলে I
গতানুগতিক প্রাণের বাহিরে এসে
উন্মুক্ত হৃদয়ের আঙ্গিনায় বসে,
ঋতু ভরা মাসে বাতাসের সুর শোনা
সোনালী সৈকত বেলায়, সাগরের ঢেউ গোনা,
সারিবদ্ধ ঝাউ, নারিকেলের তলে
দলবদ্ধ সী-গালেরা উড়ে চলে I
গেরুয়া বসনে সন্যাসী কাঁকড়ার নাচ
ধীবরের জালে রকমারি মাছ --
কত খাঁড়ি, মোহনা, নদীনালা, অতিক্রমে
ঠাই মেলে কোন সে অখ্যাত গ্রামে I
তপ্ত থরের মরুপ্রান্তর
দিশাহীন তবু জড়ায় অন্তর,
বালুকা তরঙ্গের ভাঙ্গা গড়া--
সে-দৃশ্য বারই নজর-কাড়া,
মরীচিকা সাগরে, মরু জাহাজের সারি
ঘোমটাবৃত রমনী, মাথায় মটকা পানিহারি ,
প্রখর রৌদ্র ক্লান্ত চরণে
খুঁজে পায় সে জীবনের অন্য মানে I
জঙ্গলেতে পথ খুয়ালে
ভিরু মনের দুয়ার যায় যে খুলে
অরণ্য ঘন পথ রোমাঞ্চকর,
ভালুক-ভায়া, হাতি-ভীতি, মশা ভয়ংকার I
জোঁক যদিও পাতার ফাঁকে
মন ভরে যায় পাখ-পাখলির ডাকে I
প্রভাত রঙে , শিখর কাঞ্চন বর্না,
পর্বত গাত্রের নির্ঝর চঞ্চল ঝর্না
হরিত উপত্যকা ফুলে ফুলে ঠাসা,
সুনীল আকাশে মেঘের ভেলায় ভাসা I
দুর্বার নগ তটিনীর ছন্দে,
ঝাঁঝালো জুনিপার, ব্রহ্মকমলের গন্ধে
অক, পাইন, ফার, রডডেনড্রন সাখে
অস্তরাগের ছোঁয়া মনালের পাখে I
বরফ খাদের মরণ ফাঁদে
কত চারনিক প্রাণ লুকিয়ে কাঁদে I
সংগ্রামময় পাহাড়ি জীবন
সরল সততাই তাদের পুঁজি পাটা ধন I
শঙ্খচিলের ডানায় ঘোরা
স্মৃতির অতলে তলিয়ে ফেরা I
চারনিক মন থামতে জানেনা,
আশা তাই বুকে, পাবে কোনো নতুন ঠিকানা I
[ কবি 'ক্যালকাটা ট্রেকার্স
ইউথ' এর
সভ্য ও
বিভিন্ন ভ্রমন-পত্রিকায় নিয়মিত
লেখক ]
আমাদের কথা
আরতি দে
"আমি চঞ্চল হে, আমি সুদূরের পিয়াসী"---রবীন্দ্রনাথের এই আপ্তবাক্য-কে স্মরণ করে এন.সি.সি.-র কয়েকজন দামাল ছেলে নিজেদের এন.সি.সি. কোর্স শেষ করে মনের তৃষ্ণা মেটাবার জন্যে
1971-এর
9 ফেব্রুয়ারি
এই সংস্থার জন্ম দিয়েছিলেন
. উদ্দেশ্য
ছিল
প্রকৃতি
পাঠের
সঙ্গে
সঙ্গে
যুব
সমাজের
মধ্যে
সৌভ্রাতৃত্ববোধ,
নেতৃত্ব-বোধের বিকাশ, খেলোয়াড়-সুলভ মনোভাব, মানসিক শক্তির জাগরণ, স্বাস্থ্য-সচেতনতা, প্রয়োজনে দেশ-সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে এক সুদৃঢ় সামাজ গঠন .
ঐ কয়েকজন যুবকের এই মহৎ প্রচেষ্টাকে সম্মান জানানোর জন্য এগিয়ে এসেছিলেন তৎকালীন একজন পর্বতপ্রেমী ডা: মানি বিশ্বাস (শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ) এবং তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি ভক্তি বিশ্বাস (মাসীমা). ডা: বিশ্বাস তাঁর নিজের চেম্বার 1111 বি ইন্ডিয়া মিরর স্ট্রিট -এ সংস্থাটির শুভ সূচনা করার অনুমতি দিয়েছিলেন. যতদিন উনি প্রেকটিস করেছিলেন ততদিন পর্যন্ত এটি-ই ছিল সংস্থার ঠিকানা. পরবর্তী সময়ে আমাদের এটি পরিচিত বড়দি শ্রীমতি কমলা মুখোপাধ্যায় (স্বাধীনতা সংগ্রামী) -এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এটি স্থানান্তরিত হয় ও ডা: মনি বিশ্বাসের বন্ধু ডা: লাবণ্যকুমার গাঙ্গুলী (উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ) -র বাড়ি 41, ক্রিক রো (অধুনা ডা: নীলরতন সরকার সরণি), কলকাতা 700014 তে. বৰ্তমানে এত-ই সংস্থার স্থায়ী ঠিকানা. এর সম্পূর্ণ কৃতিত্বের দাবিদার আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় বড়দি. সংস্থার শুরুর পর্বে ছিলেন অনেক নামী-দামী মানুষ. তাঁদের মধ্যে থেকে শ্রী শৈলেশ চক্রবর্তী-কে প্রথম সভাপতি নির্বাচিত করা হয়, যিনি আশি বছর বয়সেও ছোটদের সাথে পা-মিলিয়ে শুশুনিয়ায় রক ক্লাইম্বিং করতেন. এই পরম মুহূর্ত আমার নিজের চোখে দেখা. সেক্রেটারি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন আর এক স্বনামধন্য পর্বতারোহী শ্রী সনাতন ভট্টাচার্য.এঁরা কেউ-ই আজ আর আমাদের মধ্যে নেই.
জন্ম-লগ্ন থেকেই যুবসমাজ কে উদ্বুদ্ধ করার মন নিয়ে এই সংস্থা কাজ শুরু করে. 1971 সালেই এন.সি.সি.-র ছেলেদের নিয়ে প্রথম শৈলারং শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত হয় বাঁকুড়া-র শুশুনিয়া পাহাড়ে.
1972 সালে
শ্রী
সনাতন
ভট্টাচার্য-র নেতৃত্বে প্রথম শৃঙ্গ-অভিযান সংগঠিত হয় হিমাচল প্রদেশের সেন্ট্রাল
ও লিয়ন শৃঙ্গে. প্রথম ভারতীয় অভিযান কৃতকার্য হয়ে জাতীয় ও এন সি সি পতাকা উত্তোলিত হয় এই দুটি শৃঙ্গে. অভিযাত্রী
দলে
ছিলেন
অসিত
কুমার
মৈত্র,
শিশির
ঘোষ,
নিতাই
রায়,
সুভাষকান্তি
রায়,
সঞ্জয়
দত্ত,
সুশান্তকুমার
দে,
কেশব
মুখার্জী,
অসিত
রায়,
মানাস
বর্ধন,
ডা:
রঞ্জন
মজুমদার.
সেই
নেশায়
তাড়িত
হয়ে
আমরা
এ-পর্যন্ত ২২ টি অভিযান সংঘটিত করেছি (যদিও সময় বিচারে সংখ্যাটি কম) হিমালয়ের বিভিন্ন প্রান্তে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হলো
1980 সালে
সিকিমের
"গোছা"
শৃঙ্গে
বিজ্ঞান
গবেষণা
কেন্দ্রিক
অভিযান
ও
1982 তে
গাড়োয়াল
হিমালয়ের
"ভারটিকুন্ঠা"
শৃঙ্গে আলপাইন স্টাইলে ক্লাইম্বিং অভিযান. এই দুটি অভিযান-ই সংগঠিত হয়েছিল সনাস্থর বৰ্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট শ্রী অসিত রায়ের নেতৃত্বে.
পর্বতাভিযানের কথা উল্লেখ করতে হলে মেয়েদের অভিযানের কথা বিশেষ-ভাবে উল্লেখ করতে হয়. ভারতবর্ষের মধ্যে এটি একমাত্র সংস্থা যারা সম্পূর্ণ মেয়েদের অভিযান সংগঠিত করেছে. এর মধ্যে দুটি অভিযান বেশি তাৎপর্য-পূর্ণ. প্রথমটি 1982 সালে হিমাচল প্রদেশে সিবি-13 শৃঙ্গে. ইনস্টিটিউটের দুই সদস্যা আমি ও স্নিগ্ধ চৌধুরী প্রথম ভারতীয় হিসাবে শৃঙ্গে আরোহন করে দেশে ও বিশ্বে পর্বত-আরোহন
মহলে
হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলাম.
এই দলে অন্যরা ছিল বন্দনা সমজদার, আরতি ঘোষ, আল্পনা দাস. অপরটি 2008-এ গাড়োয়াল হিমালয়ে যোগীন-1 ও যোগীন-3 শৃঙ্গদুটি এক-ই দিনে এক-ই সদস্য (সীমাশ্রী ব্যানার্জী, মিতা ধর, ছন্দা গায়েন, উম্মে কুলসুম) আরোহন করে. নমিতা দত্ত-ও ছিল দলের সদস্য আর ডা: মনোজ দাস মেডিকেল অফিসার.
সফল
অভিযান
দুটি
ইতিহাসের
পাতায়
জায়গা
করে
নিয়েছে.
দুটি
অভিযানের-ই নেতৃত্বে এই অধম.
এই সংস্থাকে আরো সম্মানিত করেছে আমাদের সকালের প্রিয় সদস্য ছন্দা গায়েন 2013-তে এক-ই অভিযানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট ও মাউন্ট লোৎসে আরোহন করে. এটি বিশ্ব-রেকর্ড. পরের বছর 2014-তে ছন্দা আরো একটি আট-হাজারী শৃঙ্গ "কাঞ্চনজংঘা" আরোহন করে কিন্তু বহন করে নিয়ে আসে এক করুন বার্তা. এক-ই সঙ্গে
"ইয়াংলুঙকোং"
আরোহন
করতে
গিয়ে
আর ফিরে আস্তে পারেনি সে.
এ-পর্যন্ত আমরা 47 টি শৈলারোহণ শিবির করে 1900-র ও বেশি যুবক-যুবতী কে প্রশিক্ষিত করার সুযোগ পেয়েছি. গত ২ বছর ধরে আমরা এডভেঞ্চার স্পোর্টস-কে জনপ্রিয় করার স্বার্থে জনজাতি গোষ্ঠীর একজন করে ছেলে ও মেয়ে-কে বৃত্তি দিয়ে শৈলারোহণ-এ অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেছি. এ-বছর সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে 6-এ. এ-ছাড়াও পৰ্বত পদযাত্রা, সৈকত পদযাত্রা, সাইকেল অভিযান, মোটর বাইক অভিযান, জলপথ-অভিযান, ছোটদের এডভেঞ্চার কোর্স, আর্ত-সেবায় মেডিকেল ক্যাম্প সংগঠিত করে থাকি. তাই ভারতের আয়কর বিভাগ আয়কর আইনের 80(জি) ধারায় ইনস্টিটিউটে-কে প্রদত্ত অনুদান কার-মুক্তির ছাড়পত্র দিয়েছে.
আমাদের সর্বশেষ সংযোজন--2015 থেকে মেয়েদের জন্য হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে -এ বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স করার জন্য একটি বৃত্তি চাল করা. উদ্দেশ্য আর্থিক-ভাবে দুর্বল শ্রেণীর মেয়েদের পার্বতারোহনে
উৎসাহিত
করা.
এই বৃত্তি-টি ছন্দা গায়েনের নামে উৎসর্গীকৃত.
শুধুমাত্র পার্বতাভিযান, শৈলারোহণ বা এডভেঞ্চারের মধ্যেই আমাদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ নয়, যুবসমাজ কে পৰ্বত-আরোহন বিষয়ে প্রশিক্ষিত করার জন্য ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন সময়ে সেমিনার, লেকচার সিরিজ, ট্রেনিং কোর্স -এর আয়োজন করেছে. এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো (1) লিওর অফ হিমালয়-1978, (২) লেকচার সিরিজ ও মাউনটেন ইকোলজি এন্ড মাউন্টেনিয়ারিং
--1981, (3) ফার্স্ট
এইড
কোর্স
ফর মাউন্টেনিয়ার্স
এন্ড
ট্রেকার্স--1985,
(4) ন্যাশনাল সেমিনার অফ মাউন্টেনিয়ারিং ফুড-1996, (5) ন্যাশনাল সেমিনার অন ম্যাপস এন্ড
মাউন্টেনিয়ারিং
এক্সপিডিশনস--2010
এবং
সর্বশেষ
সংযোজন--ন্যাশনাল সেমিনার অন গ্লোবাল ওয়ার্মিং: এ কনসার্ন ফর মাউন্টেনিয়ার্স এন্ড মাউন্টেন লাভার্স--2015.
অন্য ভ্ৰমণ
রতনলাল বিশ্বাস
পায়ে পায়ে হিমালয় বেড়ানোর শুরু 1972-এ হলেও অন্য ভ্রমণের শুরু হয়েছিল আরো অনেক পরে, হঠাৎ-ই. 1981-এর জানুয়ারিতে বন্ধু সুজিত দাসের সঙ্গে ময়দানে কলকাতা বইমেলায় ঘুরছিলাম. ওখানেই আমাদের মাথায় এলো সমুদ্রের কিনারা ধরে ট্রেক করলে কেমন হয়. যেমন ভাবনা তেমনি চটজলদি কাজ. দুজনে ঢুকে পড়লাম ন্যাশনাল এটলাস-এর স্টল-এ. ভারতের উপকূল অঞ্চলের ওপর যে কয়টি প্লেটে মানচিত্র পাওয়া গেল সব কিনে ফেললাম. সেই হলো উপকূল ধরে হাঁটার ভাবনার শুরু. অবশ্য সকলের মতো আমার-ও একটা ভাবনা মনের মধ্যে কাজ করছিলো. কৈশোরে পুরি সৈকতাবাস বেড়াতে গিয়ে অনেকের মতো ঝিনুক কুড়োতে কুড়োতে ও আছড়ে পড়া ঢেউ দেখতে দেখতে ভিজে বালিতে পা রেখে স্বর্গাশ্রম ঘাট ছাড়িয়ে দক্ষিণ দিকে চলে গিয়েছিল অনেক দূরে. তখন মনে হয়েছিল সাগর-পাড় ধরে এমন হাঁটলে কেমন হয় .সব ভাবনা নিয়ে পৌঁছে যেতে হবে বালাইডার কাছে. (চলবে)
লেখক বিশিষ্ট ভ্রমণ সাহিত্যিক
mind-blowing writing...
ReplyDelete